আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টিভি নেই, ফোন নেই, বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে রুশরা। হঠাৎ আদিম কোনও দুনিয়ায় চলে আসা, দিনের বেলাতেও যেন ‘অন্ধকার’। পোড়া গাছের সংখ্যা কেউ না গুনলেও মৃত্যুর চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে তারা। রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা মানবদেহ পচতে শুরু করেছে। দাফনের জন্যও কেউ নেই। কিছু জায়গায় গণকবর দেওয়া হয়েছে। এ শহরের কত হাজার বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে, তার কোনও হিসেব নেই। যুদ্ধের আগে মারিয়ুপোলে সাড়ে ৪ লখ মানুষের বাস ছিল। এখনও ১ লখের মতো মানুষ রয়েছে। মেয়র বাদিম বয়চেঙ্কো বলছেন, ‘‘আর খাবারও মজুত নেই। পানি নেই। খুব খারাপ অবস্থা। যাঁরা পালাতে পেরেছেন, তাঁরা বলছেন, পৃথিবীতে নরক আছে, এই মারিয়ুপোলেই।
রাশিয়ার দখল করে নিয়েছে এই শহর। আজ়ভস্টল কারখানা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে ‘বন্দি’ ইউক্রেনীয় বাহিনী একাংশ। তাদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ৫০০ জন জখম সেনা। আর হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ। উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, এর মধ্যে রাশিয়া বোমা ফেলেছে কারখানার উপরে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে বেশির ভাগ অংশ। কারখানার নীচে বাঙ্কারে কত জন বেঁচে আছেন, তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।
দেশটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, মারিয়ুপোল থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করা হবেই। মস্কো দাবি করেছে, আজ়ভস্টলের কাছ থেকে ২৫ ও ২১ জনের দু’টি দলকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন প্রশাসন জানিয়েছে, গত কাল ২০ জন কারখানা থেকে বেরোতে পেরেছেন। তর্ক-বিতর্কের মধ্যে একটাই আশার আলো, মারিয়ুপোলবাসীকে উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো উঠেপড়ে লেগেছে। ইউক্রেন সরকারও আশ্বাস দিয়েছে, মারিয়ুপোল ছাড়তে আগ্রহী সকলকে উদ্ধার করা হবে। এরই মধ্যে আজ আচমকা ইউক্রেনের লিভিভে হাজির অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই বিশেষ দূত যুদ্ধে ঘরহারা মানুষদের সঙ্গে দেখা করেন। স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সঙ্গে শিশু-শরণার্থীদের কথা বলেন। তাঁকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধের অভিঘাত থেকে শিশুমনকে বাঁচাতে নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন মনোবিদেরা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মারিয়ুপোল। গোটা শহরটাকে কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। এখন ধ্বংসস্তূপ থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারে একপ্রকার নিমরাজি হয়েছে তারা। কিন্তু ইউক্রেনের অন্যত্র তাদের ধ্বংসলীলা চলছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের বিভিন্ন গ্রাম-শহরে।
মস্কো দাবি করেছে, গতকাল তারা ইউক্রেনে ১৭টি সেনা ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। তাদের হামলায় ২০০-রও বেশি ইউক্রেনীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে। একটি অস্ত্রাগারও ধ্বংস করেছে তারা। ২৩টি যুদ্ধযান গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
ওডেসার গভর্নর দাবি করেছেন, রুশরা তাদের বিমানবন্দরেও ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছে। রানওয়ে ভেঙে গিয়েছে। সে কথা অবশ্য প্রকাশ করেনি মস্কো। তারা দাবি করেছে, ওডেসায় একটি বায়ুসেনা ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেনের দু’টি এসইউ-২৪এম বোমারু বিমান গুলি করে নামানো হয়েছে। এ-ও দাবি করা হয়েছে, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছে তারা।
মতিহার বার্তা / এম আর টি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.